,

আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মেয়র আরিফ ও জি.কে গউছ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছ ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। স্থানীয় বিএনপির এ দুই নেতা জানিয়েছেন, আদালতে আত্মসমর্পণ করে তারা জামিন আবেদন করবেন। তারা জানিয়েছেন, মামলার চার্জশিটে পলাতক হিসেবে দেখানো হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রেই আছেন। (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন) তারা এ-ও বলেছেন, আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, শিগগিরই তিনি আদালতে যাচ্ছেন। তবে, কোন আদালতে উপস্থিত হবেন সেটি গতকাল বিকাল পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি। এ নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন। আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনরা গতকাল এ প্রতিনিধি কে জানিয়েছেন, রোববার হবিগঞ্জের আমলি আদালতে নাম-ঠিকানা সঠিক করে তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। যদিও সর্বশেষ দাখিল করা চার্জশিটেও আরিফুল হক চৌধুরীর নাম আগের মতোই আরিফুল ইসলাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমি পলাতক নই- জি.কে গউছ; হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপির সেক্রেটারি আলহাজ জি.কে গউছ বলেছেন, আমি পলাতক নই। হবিগঞ্জ পৌরসভার শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের পথে। এসব প্রকল্পের সঙ্গে বৈদেশিক অর্থ জড়িত। প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত যাতে টেন্ডার আহ্বান করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে আমি কয়েক দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। আমি নিয়মিতই পৌরসভার কার্যক্রমে ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছি। পলাতক থাকার প্রশ্নই আসে না। শিগগিরই আমি আদালতে হাজির হচ্ছি। মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে, আইনের মাধ্যমেই সত্য বেরিয়ে আসবে। গত ২১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রশিদ আহমেদ মিলনের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক ১১ আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। জি.কে গউছ বলেন, আমি ৯ বছর ধরে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছি। উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে কুচক্রীমহল নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্যই পরিকল্পিতভাবে কিবরিয়া হত্যা মামলায় আমাকে সম্পৃক্ত করেছে। আমি সরকারিভাবে পৌরসভার মেয়র হিসেবে ফ্রান্স, ইতালি, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, গ্রিস, বাহরাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। এসব দেশের বিভিন্ন উন্নয়নকাজকে অনুসরণ করে হবিগঞ্জ পৌরসভায়ও করার চেষ্টা করেছি। আমি ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮ বার পবিত্র হজ পালন করেছি। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করা হয়। ঠিক সেদিন আমি আমার বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনে ছিলাম। আমি কোন দিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বা মুফতি হান্নানকে সরাসরি দেখিনি। বাবরের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কোন ওঠাবসাও ছিল না। তিনি বলেন, আমার আইনজীবীরা মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করছেন, শিগগিরই আমি আদালতে হাজির হবো। জি কে গউছ বলেন, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করা হয়, বিএনপির আমলে মামলার তদন্ত করা হয়, আমার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে ১/১১ সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা ২ বছর মামলার তদন্ত করেছে, আমার সম্পৃক্ততা পায়নি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে মামলার তদন্ত করে, তখনও আমার সম্পৃক্ততা তারা খুঁজে পায়নি। ৩ সরকারের আমলে দু’বার চার্জশিট দেয়া হয়েছে, ওই সব চার্জশিটেও আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আসে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার। সেই অবৈধ সরকার ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর এসে এখন বলছে, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গ নাকি আমার সম্পৃক্ততা রয়েছে। অবৈধ সরকার অবৈধভাবেই কিবরিয়া হত্যা মামলায় আমাকে জড়িয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কোন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে কাউকে ধ্বংস করা যায় না। আমাকে তারা ধ্বংস করতে পারবে না। ১/১১-এর অবৈধ সরকার আমার উপর অনেকগুলো মিথ্যান্ত প্রত্যেকটি মামলাতেই আমি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খালাস পেয়েছি। যদি বিচারকরা নিরপেভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করেন তবে ইনশাআল্লাহ কিবরিয়া হত্যা মামলা থেকেও আমি আইনি প্রক্রিয়ার মুক্ত হতে পারবো। আমাকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ১০ বছরের আগের একটি নৃশংস হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমার সব বিপদ-আপদে, সুখে-দুঃখে হবিগঞ্জের সাধারণ মানুষ আমার পাশে থেকে সাহস ও সমর্থন যুগিয়েছিলেন, ভবিষ্যতেও তারা আমার পাশে থাকবেন। তিনি বলেন, আমি হবিগঞ্জবাসী ও আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই। আমি আশা করি যেহেতু কিবরিয়াকে হত্যাকাণ্ডের সময় আমি আমার পিতার সঙ্গে পবিত্র হজের জন্য পবিত্র মক্কা শরিফে ছিলাম, আল্লাহই একদিন সত্য উদ্ঘাটন করে আমাকে ন্যায়বিচার প্রদান করবেন। আদালত চার্জশিট গ্রহণের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে, ওই দিন আদালত থেকে কোন কাগজপত্র পাননি আরিফুল হক চৌধুরীর আইনজীবীরা। পরে আদালত থেকে কাগজপত্র সংগ্রহের পর এখন তিনি জামিনের জন্য আদালতে উপস্থিত হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে তিনি ঢাকা ও সিলেটের একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আরিফুল হক চৌধুরী তাকে মামলায় ফাঁসানোর জবাব দিতে চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। এদিকে, কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম নিয়ে নতুন করে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। সিআইডি সিলেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুলের জমা দেয়া সম্পূরক চার্জশিটে মামলার আসামি হিসেবে দুই আরিফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূরক চার্জশিটে ১১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম। এ ছাড়া মুফতি হান্নানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে চার্জশিটের ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় সিলেটে পরিকল্পনামতো কাজ করতে লুৎফুজ্জামান বাবর যে দু’জনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের নাম হিসেবে রয়েছে জি.কে গউছ ও ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ। সম্পূরক চার্জশিটের তৃতীয় পৃষ্ঠায় আরিফুল হক চৌধুরীর যে স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে তাতেও গ্রামের নাম ভুল রয়েছে। আরিফুল হক চৌধুরীর গ্রাম পুবাট্টা উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার গ্রাম হচ্ছে উবাহাটা। তবে চার্জশিটে উল্লিখিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বর্তমান ঠিকানা সঠিক রয়েছে। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের দেয়া জবানবন্দিতে আসামি করা হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনের সিদ্ধেশ্বরীর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফকে। ওই মামলায় আরিফুল ইসলাম আরিফ জেলও খেটেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটেও মুফতি হান্নানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে যে আরিফের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ। চার্জশিটে দুই আরিফের নাম উল্লেখ থাকায় এ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে সিদ্ধেশ্বরীর কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফ না সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম বলেছেন তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি সিলেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে দু’জন আরিফের কথা উল্লেখ করেছেন। একজন সিদ্ধেশ্বরীর কমিশনার ও অপরজন সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কমিশনার।


     এই বিভাগের আরো খবর